কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী বালি নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের বালি পাওয়া যায়। আমরা এ বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত জানব। আমরা জানি বালি একটি দানাদার উপাদান। যা সূক্ষ্মভাবে বিভক্ত শিলা এবং খনিজ কণার সমন্বয়ে গঠিত। বালির বিভিন্ন গঠন রয়েছে ,তবে এর শস্য আকার দ্বারা একে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে।
নির্মাণ কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বালি। যা সিলিকা থেকে তৈরি হয়ে থাকে। বালির দানা নুড়ির চেয়ে ছোট হয় তবে পলির চেয়ে মোটা। অর্থাৎ- যেসব মাটির ভরের ৮৫% এর বেশি বালি-আকারের কণা তাদের কে বালি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে । বালির গঠন ও স্থানীয় পাথরের উৎস এবং বিভিন্ন অবস্থার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বালি মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ । কংক্রিট তৈরির জন্য উপযুক্ত বালির অনেক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য বালি, প্রচুর পরিমাণে থাকলেও তা কংক্রিট তৈরিতে উপযুক্ত নয়।
প্রতি বছর বহু টন সৈকত বালি এবং জীবাশ্ম বালি নির্মাণের কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় সমুদ্র বা নদীর উপক’লে, সমুদ্রের তলায়, নদীয় তলায় বালি পাওয়া যায়।
বালিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
১। পিট বালি
২। নদীর বালি
৩। সমুদ্রের বালি
১। পিট বালিঃ
মাটিতে গর্ত করলে এই প্রকার বালি পাওয়া যায়। এই বালি মসৃণ, কোণাকার এবং ক্ষতিকারক লবণ থেকে মুক্ত থাকে। এই প্রকার বালি সাধারণত মর্টারের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২। নদীর বালিঃ
এ ধরনের বালি সাধারণত নদীর উপকূলে পাওয়া যায়। যা চিকন ও গোলাকার হয়। এটা পিট বালি অপেক্ষা সূক্ষ্ম তাই প্লাষ্টারিং এর কাজে এই বালি বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩। সমুদ্র বালিঃ
এই প্রকার বালি সমুদ্রের উপকূলে পাওয়া যায়। যা নদীর বালির মতই সূক্ষ্ম ও গোলাকার হয়ে থাকে। কিন্তু এই প্রকার বালিতে ক্ষতিকারক লবণ থাকে। এ বালি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করলে, বায়ুমণ্ডল হতে পানি শোষণ করে তার যার ফলে নির্মাণ লোনাক্রান্ত হয় । তাই সমুদ্র বালি নির্মাণ কাজে ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
আবার প্রচলিত ভাবে বালি তিন প্রকারঃ
১। ভিটি বালি: ভিটি বালু-র এফ এম সাধারণত ০.৫ থেকে ০.৭ হয়ে থাকে। এ বাল্ ভরাট কাজে ব্যবহৃত হয়।
২। লোকাল বালি: এর এফ এম সাধারণত ১.২ থেকে ১.৮ হয়। এ বালি, গাঁথুনি, প্লাস্টারিং এর কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩। মোটা বালি: আমাদের বাংলাদেশে মোটা বালু, সিলেটে অধিক হারে পাওয়া যায়। এর এফ এম ২.৩ থেকে ২.৮ হয়। মোটা বালি ঢালাই এর কাজে ব্যবহৃত হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলঃ গোলাকার বালু অপেক্ষা কোণাকার বালু উৎকৃষ্ট। ঢালাইয়ের কাজে মোটা বালির ব্যবহারই ভাল।
কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী বালিঃ
কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী বালির নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।
১। বালি পরিষ্কার থাকবে , কোন কাদা, ময়লাযুক্ত থাকবে না।
২। এ বালিতে লবণ থাকতে পারবেনা। লবণ মুক্ত থাকতে হবে।
৩। এফএম ঠিক থাকতে হবে।
৪। কোনাকার বালি ।
বালি ব্যবহারে সতর্কীকরণঃ
বালির সঙ্গে কোন ময়লা, কাদামাটি থাকতে পারবে না এবং লবণাক্ত বালি ব্যবহার করা যাবে না। নির্মাণ কাজের পূর্বে বালি ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। কারণ- বালির সাথে কাদা, লবণ, ময়লা, আগাছা, ডালপালা, নুড়ি ইত্যাদি মিশে থাকে।
বালি পরীক্ষাঃ
বালির গুণাবলী জানার জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করা প্রয়োজন-
১। কিছু বালি দুআঙ্গুলের ফাঁকে নিয়ে ঘষা দিতে হবে, যদি আঙ্গুলের সাথে ধুলা জাতীয় দ্রব্য লেগে থাকে, তবে বুঝতে হবে বালির সাথে ধুলা রয়েছে।
২। মুখ নিয়েও বালি পরীক্ষা করা যায়। একটু বালি মুখে নিয়ে বোঝা যাবে এর মাঝে লবণ জাতীয় পদার্থ আছে কিনা।
৩। একটি পরিষ্কার কাঁচের গ্লাসে পানি নিয়ে তার মাঝে কিছু বালি ছেড়ে দিতে হবে এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। যদি বালিতে ধুলা থাকে তবে তার স্তর বালির উপরে হবে।
৪। কিছু পরিমাণ কষ্কিক সোডা ৩% একটি বোতলে নিয়ে তার সাথে অল্প কিছু বালি যোগ করে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে এবং কিছুক্ষণ ঝাকাতে হবে এবং ২৪ ঘন্টা ঐ অবস্থায় রেখে দিতে হবে। পরবর্তীতে যদি দেখতে পান যে, বোতলে রক্ষিত দ্রব্যের রং পরিবর্তন হয়ে বাদামী হয়েছে, তবে বুঝতে হবে বালিতে রাসায়নিক পদার্থ বিদ্যমান।
৫। বালু তীক্ষ্ম নজর দিয়ে দেখলে যদি এতে পাথর, কয়লার টুকরা বা অন্য কোন নোংরা থাকে তাহলে ব্যবহারে না নেওয়াই ভালো। আরেকটা উপায় হল, একটা কাঁচের গ্লাসে আধা গ্লাস বালু নিয়ে বাকিটা পানি দিয়ে ভরে দিন এবং একটা চামচ দিয়ে ভাল করে নেড়ে নিন। বালুতে নোংরা থাকলে পানির রং ময়লা বা ঘোলা হয়ে যাবে। বালুটা নীচে বসে যাওয়ার পর দেখুন যদি বালুর ওপর মাটির স্তর বেশী মোটা হয় তাহলে এ বালু ব্যবহার করার দরকার নেই। যদি ভুল ক্রমে এমন বালু এসে যায় এবং পরীক্ষার পরে ব্যবহারযোগ্য মনে না হয় তাহলে ও চিন্তার কোন কারণ নেই, এমন বালুকে পরিস্কার করারও উপায় আছে।
৬। বালুকে ধুয়ে পরিস্কার করা যায়: বালুর গাদায় পানি ঢেলে দিন তাতে করে ময়লা মাটি নীচে বসে যাবে। এবার কোদাল দিয়ে বালুটাকে ভাল করে মিশিয়ে নিন তারপর চালনি দিয়ে ছেঁকে নিন। বালু পরিস্কার হয়ে যাবে।
৭। ভেজাল বালু ব্যবহারে অসুবিদা হতে পারে: শ্রমিকেরা মশলাতে বেশী পানি মেশানো পছন্দ করে। যদি প্রথম থেকেই বালুতে পানি বেশী থাকে তাহলে, সেই বালু ব্যবহারে নির্মাণ কমজোর হতে পারে। তাই যদি দেখেন বালু ভেজা, তবে ঠিকাদারকে বলবেন ইঞ্জিনিয়ার এর পরামর্শ মতে পানি মেশাতে।