ভালো বালি চেনার উপায় ও বালির মাঠ পরীক্ষা
বালি একটি দানাদার উপাদান যা সূক্ষ্মভাবে বিভক্ত শিলা এবং খনিজ কণার সমন্বয়ে গঠিত। বালির বিভিন্ন গঠন আছে তবে এর শস্য আকার দ্বারা একে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বালির দানা নুড়ির চেয়ে ছোট তবে পলির চেয়ে মোটা। বালি ,মাটি বা মাটির মত একটি টেক্সচারাল শ্রেণিকেও উল্লেখ করতে পারে; অর্থাতৎ যেসব মাটির ভরের ৮৫% এর বেশি বালি-আকারের কণা তাদের কে বালি হিসেবে বুঝানো হয় ।
বালিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়
- পিট বালি
- নদীর বালি
- সমুদ্রের বালি
ভালো বালি চেনার উপায়
১. পিট বালিঃ
মাটিতে গর্ত করে এই প্রকার বালি পাওয়া যায়। যা মসৃণ, কোণাকার এবং ক্ষতিকারক লবণ থেকে মুক্ত থাকে। এই প্রকার বালি সাধারণত মর্টারের কাজে ব্যবহৃত হয়।
২. নদীর বালিঃ
এই প্রকার বালি নদীর উপকূলে পাওয়া যায়। যা চিকন ও গোলাকার হয়ে থাকে। এটা পিট বালি অপেক্ষা সূক্ষ্ম তাই প্লাষ্টারিং এর কাজ এই বালি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩. সমুদ্র বালিঃ
ভালো বালি চেনার উপায়, এই প্রকার বালি সমুদ্রের উপকূলে পাওয়া যায়। যা নদীর বালির মত চিকন ও গোলাকার হয়ে থাকে। তবে এই প্রকার বালিতে ক্ষতিকারক লবণ থাকে।
মোটা দানার বালি
এই প্রকার বালির দানা তুলনামূলক একটু বড় আকৃতির হয় তাই নির্মাণ কাজে ঢালাইয়ের সময় খুবই উপযোগী। কংক্রিট তৈরিতে সিলেট বালি সমান থাকে।
বালি ব্যবহারে সতর্কীকরণ
ভালো বালি চেনার উপায়. বালির সঙ্গে কোন প্রকার ময়লা, কাদামাটি থাকতে পারবে না। লবণাক্ত বালি ব্যবহার করা যাবে না এবং নির্মাণ কাজের পূর্বে বালি ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন বালির সালে সংযুক্ত কাদা, লবণ, ময়লা, আগাছা, ডালপালা, নুড়ি বের হয়ে যায়।
প্রচলিত ভাবে বালি তিন প্রকারঃ
ভিটি বালি: ভিটি বালু-র এফ এম ০.৫ থেকে ০.৭। ভরাট কাজে ব্যবহৃত হয়। এটা হচ্ছে বালুর কোয়ালিটির মধ্যে সবচেয়ে নিম্নতম। মুলত এই বালুর নির্দিস্ট কোন সাইজ বা কোন FM থাকে না। ময়লা এবং মাটি মিশ্রিত অবস্থায় থাকে এবং কিছুটা কালো বর্নের হয়ে থাকে। এই বালিটি প্রধানত ব্যবহার করা হয় বাড়ির গ্রেড বীম এবং ফাউন্ডেশন এর ফিলিং এর কাজে। প্রায় প্রতিটি বাড়িই কিছুনা কিছু উ্চু করা হয়। এই উচু করার কাজে এই ভিটি বালু ব্যাবহার করা হয়। এগুলো প্রতি গাড়ি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। চেস্টা করবেন ছোট গাড়িতে না নেয়ার জন্য। বড় ডাম্প ট্রাক ব্যাবহার করুন। এতে বেশ ভালোই আর্থিক সাশ্রয় হবে।
লোকাল বালি: এর এফ এম ১.২ থেকে ১.৮। গাঁথুনি, প্লাস্টারিং এর কাজে ব্যবহৃত হয়। এটা মুলত ফ্রেস সাদা বালু। এই বালিটি লাগে মুলত ঢালাই এর কাজে। সাধারন লাল বালু বা সিলেট বালুর সাথে মিশ্রিত করেই ঢালাই করা হয়। বাজারে এই বালির কথা বলে অনেকেই অনেক ধরনের বালু সাপ্লাই দিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে খুব কম সাপ্লাইয়ারই আসল বালূটি দিয়ে থাকে। সাধারনত এই বালুটি সম্পুর্ন প্রাকৃতিক ভাবে কালেকশন করা হয়। তাই ঠিক কোথা থেকে বালুটি কালকশন হচ্ছে সেটা খুবই গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়। তাই বালু কেনার আগে জেনে নিন কোন এলাকার বালু কিনছেন। সাধারনত ঢাকার মধ্যে ভুয়াপুরের বালু সবচেয়ে উত্তম।
মোটা বালি: মোটা বালু সিলেটে অধিক পাওয়া যায়। এর এফ এম ২.৩ থেকে ২.৮। ঢালাই এর কাজে ব্যবহৃত হয়। এই বালুটি লাল বালু বলার কারন হচ্ছে এর রঙ লাল। এবং এটির মুল সাপ্লাইটা আসে সিলেট থেকে। সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিসনাকান্দি সহ বেশ কিছু এলাকায় এই বালু বেশ ভালো পাওয়া যায়। এছারা ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই বালুটি পাওযা যায়। কেনার সময় বড় গাড়ির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিন। কারন লোকালি এই বালিটির বেশ খারাপ কিছু কোয়ালিটির বালি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে মরা পাথর এরগুরো সহ কাদা মাটি সহ বালি।
গোলাকার বালু অপেক্ষা কোণাকার বালু ভাল । ঢালাইয়ের কাজে মোটা বালুই ভাল। বালুকে বলা হয় ফাইন এগ্রিগেট। বালু পরিস্কার ও কাদা মুক্ত হওয়া উচিত।
নির্মাণ কাজে বালির ব্যবহার ও বালির মাঠ পরীক্ষা
ভালো বালি চেনার উপায়
নির্মাণ কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বালি, নির্মাণ কাজের জন্যে বলতে গেলে বালি ছাড়া কোন কাজ করাই সম্ভব নয়। ঢালাই, ইটের গাঁথুনি, প্লাস্টার ইত্যাদি কাজে বহুলভাবে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি মূলত সিলিকা থেকে পাওয়া যায়। সাধারণত সমুদ্র বা নদীর উপকূলে, সমুদ্রের তলায়, নদীয় তলায় বালি পাওয়া যায়। এই বালিকে আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি। এগুলো হচ্ছে: পিট বালি, নদীর বালি, সমুদ্রের বালি। পিট বালি সাধারণত ভরাট করার কাজে ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রের বালিতে ক্ষতিকর লবণ থাকায় ব্যবহারের অযোগ্য। তাই নির্মাণকাজে মূলত নদীর বালি ব্যবহার করা উচিৎ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই বালির মাঠ পরীক্ষা করতে হবে।
১। নির্মাণ কাজে বালি ব্যবহার করার আগে কোন প্রকার ময়লা, কাদামাটি যেন না থাকে তা বালির মাঠ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। নির্মাণ কাজের পূর্বে বালি ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন বালির সাথে সংযুক্ত কাদা, ময়লা, আগাছা, ডালপালা, নুড়ি বের হয়ে যায়।
২। খুব সহজে কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষা দ্বারা গুণাগুণ চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন:
ক) এক হাতের তালুতে বালি নিয়ে অন্য হাত দিয়ে ঘষলে যদি হাতের তালুতে ময়লা লেগে যায়, তবে বুঝতে হবে বালি ভালো নয়।
খ) সামান্য বালি মুখে নিয়ে লবণাক্ততা পরীক্ষা করা যেতে পারে।
৩। একটি কাচের গ্লাসে ১/৪ ভাগ বালি দ্বারা এবং ৩/৪ ভাগ পানি দ্বারা পূর্ণ করে ঝাঁকানোর পর স্থির করলে যদি বালির স্তর একেবারে নিচে থাকে, তবে বুঝতে হবে বালি ভালো। রঙহীন হলেও ভালো বালি বলে চিহ্নিত হবে।
৪। ৩% কস্টিক সোডা সল্যুশনের সাথে অল্প কিছু বালি যোগ করে একটি বোতলে কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে ২৪ ঘন্টা ঐ অবস্থায় রেখে দিতে হবে। যদি বোতলে রক্ষিত দ্রব্যের রং পরিবর্তন হয়ে বাদামী হয়, তবে বুঝতে হবে বালিতে রাসায়নিক পদার্থ বিদ্যমান।
৫। আমরা সাইটে বালি ট্রাকে করে নিয়ে আসি। অনেক সময় অল্প শিক্ষিত মানুষ এই বালি গ্রহণ করে থাকে। সেই ব্যক্তিকে বোঝাতে হবে যে এক ট্রাক শুকনো বালির চেয়ে এক ট্রাক ভেজা বালির ওজন অনেক বেশি। তাই রাতের বেলা বালি সাইটে আসলে অবশ্যই তা শুকনো/ভেজা তা দেখে নিতে হবে। কারণ সম্পূর্ণ শুকনো বালিতে পানি মেশালে বালির আয়তন বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধির ফলে আমরা পরিমাণে কম বালি পাব।
৬। সাইটে পানি দিয়ে পরিশোধনের পর আগে শুকাতে হবে। ভিজা বালি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করলে তা স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়।
৭। ল্যাবরেটরিতে বালির দানার গ্রেডিং নিরূপণ করা হয়। এই পরীক্ষার ফলাফলকে Fineness Modulus (FM) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নির্মাণ কাজের জন্য উপযুক্ত চিকন বালির এফ এম ১.২ থেকে ১.৫ হতে হবে।
কালোজিরার উপকারিতা ও সর্তকতা, জানলে অবাক হবেন।
#ভালোবালিচেনারউপায়