বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক, আমাদের বাংলাদেশের অধীকাংশ মানুষের বেকার। আর বেকারত্ব দূর করার জন্য গুরুপ্তপূর্ন ভূমিকা রাখে আত্নকর্মসংস্থান। আর আত্নকর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রয়োজন বিনা জামানতে ব্যাংক লোন।
তাই আজ আমরা বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক সেই ব্যাংক গুলো কি কি শর্ত ও নিয়ম মাফিক লোন দেয় সেই বিষয়ে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বিনা জামানতে ঋণ কারা পাবে?
বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক, আপনি যদি কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে জামানত বিহীন লোন নিতে চান। তাহলে আপনাকে নিচের রিকোয়ারমেন্ট এর মধ্যে পড়তে হবে।
১. সর্বনিম্ন আপনাকে ৫ম শ্রেণী পাস হতে হবে
২. আবেদনকারী বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর থেকে ৩০ বছর হতে হবে। তবে ৪০ বছর শিথিলযোগ্য
৩. আপনাকে লোন পেতে হলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিডা, বিসিক, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত হতে হবে।
বিনা জামানতে কত টাকা লোন নেওয়া যাবে?
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে সবনিম্ন ৫ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যাংক লোন নিতে পারবেন। এই লোন মূলত ৮% সরল সুদে দেওয়া হয়। আর আপনি যদি কিস্তি দেওয়া ক্ষেত্রে কোন রকমের খেলাপি করেন তাহলে সুদের পরিমান বাড়িয়ে ১০% করে দেওয়া হয়।
বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক
এখন পর্যন্ত ৮টি ব্যাংক এ প্রকল্প চালু করেছে। ব্যাংক গুলো হলঃ
১. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক,
২. সোনালী ব্যাংক,
৩. অগ্রণী ব্যাংক,
৪. পূবালী ব্যাংক,
৫. এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক।
৬. ন্যাশানাল ব্যাংক
৭. মিচুয়্যাল ট্রাষ্ট ব্যাংক
৮. কর্মসংস্থান ব্যাংক
এই ৮ টি ব্যাংক ৯ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে এই প্রকল্পে লোন দিয়ে থাকে । এই ব্যাংকগুলো সবনিম্ন ২.৫ থেকে সবচ্চো ৩ লাখ টাকা লোন দিয়ে থাকে।এই লোনের মেয়াদ ১ থেকে ৩ বছর। এই ব্যাংকগুলো লোন প্রদানের শর্তাবলী প্রায় একই রকম। একবার ভিসা নিশ্চিত হয়ে গেলে, আবেদনকারীকে অবশ্যই ভিসার দুটি ফটোকপি ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংক সমস্ত কাগজপত্র যাচাই করে ফোন বা এসএমএসের মাধ্যমে ৩ দিনের মধ্যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক
বেকারত্ব দূরীকরন ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি সুযোগ সুবিধা জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক বিনা জামানত লোন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে আপনি জামানত বিহীন লোন নিতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকঃ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদের প্রকল্পের নাম দিয়েছে “অভিবাসন ঋণ প্রকল্প”। এই লোন পরিশোধের মেয়াদ ২ বছর হয়ে থাকে। লোনের পরিমান বিভিন্ন দেশে অনুসারে আলাদা আলাদা হয়। এই লোনের সুদের হার ৯%। আপনি যদি সিঙ্গাপুরে যান, আপনাকে লোন পরিশোধের জন্য ১২ মাস সময় দেওয়া হবে।প্রতি মাসে ১ টি করে কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও, আপনি যদি অন্য দেশে যান, তবে আপনাকে এই লোন আপনাকে ২ বছরে বা ২২ টি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। লোন মঞ্জুর হওয়ার পরে দুই মাসের ছাড় পাবেন। তার মানে আপনাকে প্রথম ২ মাস লোনের কোন কিস্তি দিতে হবে না।
সোনালী ব্যাংকঃ
সোনালী ব্যাংক এই প্রকল্পটির নাম দিয়েছে “প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প”। সোনালী ব্যাংক সর্বোচ্চ লোনের পরিমাণ ৩ লাখ টাকা। লোন পরিশোধের সর্বাধিক প্রদানের সময় ৩ বছর। সোনালী ব্যাংক লোনটি ২ বছরে ২৪ কিস্তিতে বা ৩ বছরে ৩৬ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে বলে থাকে। উভয় মেয়াদে ৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ড পাবেন। আপনাকে প্রতি মাসে ১ টি কিস্তি দিতে হবে। সরল সুদের হিসাবে লোনের সুদের হার ১২% অর্থাৎ লোনের সুদের উপর কোন সুদ নেওয়া হবে না। আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মতো করে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।
অগ্রণী ব্যাংকঃ
অগ্রণী ব্যাংক এই লোন প্রকল্পের নাম দিয়েছে “প্রবাসী ঋণ প্রকল্প”। অগ্রণী ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা লোন দিয়ে থাকে। লোন পরিশোধের সর্বনিম্ন ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের বাংলাদেশী যেকোনো নাগরিক বিদেশ যাওয়ার জন্য অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫০,০০০/- টাকা থেকে ৩,০০,০০০/- টাকা পেয়ে থাকেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকঃ
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এই প্রকল্পটির নাম দিয়েছে ‘এনআরবি মাইগ্রেশন লোন’। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা দিয়ে থাকে। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক সুদের হার ১৪%। ১, ২ ও ৩ বছরের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে হবে। গ্রেস পিরিয়ড পাবেন ৩ মাস। আপনি বিদেশ যাওয়ার ৩ মাস পর থেকে লোনের মাসিক কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হবে। সর্বনিম্ন বয়স ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ বছরের বাংলাদেশী যেকোনো নাগরিক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লোন নিতে পারবেন।
পূবালী ব্যাংকঃ
পূবালী ব্যাংক এই প্রকল্পটির নাম দিয়েছে ‘নন রেসিডেন্ট ক্রেডিট স্কিম’। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক সর্বোচ্চ ২.৫ লাখ টাকা লোন দিয়ে থাকে । এই লোনের পরিশোধের মেয়াদ ২ বছর । প্রতি মাসে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। প্রথম ২ মাস গ্রেস পিরিয়ড। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এব্যাংকে সুদের হার ১৩%। কোনো জামানত দিতে হবে।
এই লোন লাভের যোগত্য সমুহঃ
আবেদনকারীর অনুপস্থিতিতে তাকে অবশ্যই তার আত্মীয়-স্বজনদের লোন ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল এমন কোন ব্যক্তিকে এই লোনে পরিশোধের গ্যারান্টি দিতে হবে। একবার ভিসার সত্যতা যাচাই হয়ে গেলে, আপনাকে অবশ্যই ব্যাংক ম্যানেজার এর কাছে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে। লোন নেওয়ার সময়, আবেদনকারীকে একটি সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তার সমস্ত আয় বা রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে হবে। লোন পরিশোধের জন্য অবশ্যই একটি হলফনামা জমা দিতে হবে।
বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক
বিনা জামানতে ঋণ নিতে যা প্রয়োজন
১. আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
২. ব্যাংক লোনের জন্য আপনাকে ব্যবসায়ের জন্য ২ বছরের অভিজ্ঞা ও বেসিসের সুপারিশের প্রয়োজন হতে পারে।
৩. আপনার বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর হতে হবে। তবে পুরাতন লোনগ্রহীদের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য
৪. শাখার অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
৫. আপনার ব্যবসায়ের আয়-ব্যয়ের বিররণীর হিসাব থাকতে হবে।
৬. ঋণ ব্যবহারের যোগ্যতা, ঋণ পরিশোধের আর্থিক ক্ষমতা ও আচারনের সুনামের অধিকারের হতে হবে।
৭. আপনাকে ব্যাংকের নিকট গ্রহনযোগ্য ব্যবসায়ী হতে হবে।
৮। অন্য কোন ক্যাংক থেকে ঋণ খেলাপি গ্রহন যোগ্য হবে না।
বিনা জামানতে ঋণ নিতে যেসব ডকুমেন্টের প্রয়োজন
১. সরকারি জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি দিতে হবে।
২. কাউন্সিলার কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
৩. আবেদনকারীর গ্যারেন্টারের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি
৪. আপনার ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি যেমন: ওয়াসা বিল, গ্যাস বিল, ইলেকট্টিক বিল ইত্যাদি
৫. গ্যারেন্টারের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
৬. দলিল/ পর্চার ফটোকপিসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান/ পৌর মেয়র/ সিটি কপোর্রেশন ওয়ার্ড
৭. প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট ফটোকপি সত্যায়িত হতে হবে।
৮. ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে আপডেট ট্টেড লাইসেন্স থাকতে হবে।
৯. ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে আপডেট টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে
শেষ কথাঃ বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক
এই ৮ টি ব্যাংক থেকে জামানত ছাড়া বিদেশ যাওয়ার জন্য লোন পাবেন । উপরোক্ত ব্যাংক গুলোর মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন নিয়ে আপনি প্রবাসে এতে পারবেন। এই লোনের সব থেকে ভাল দিক হল আপনাকে কোন কিছু জামানত রাখতে হবে না। বিনা জামানতে আপনি লোন নিয়ে বিদেশ যেতে পারবেন। চাকরি করে মাসে মাসে টাকা দিয়ে সেই লোন পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের কমেন্ট করুন। আপনার বিদেশ যাত্রা নিরাপদ হোক। ধনবাদ।
বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক