Health tips

মধুর উপকারিতা ও খাঁটি মধু চেনার উপায় 2022

মধুর উপকারিতা

মধুর উপকারিতা: সাধারণভাবে বলতে গেলে মধু হচ্ছে একটি তরল মিষ্টি জাতীয় আঠালো পদার্থ, যা সাধারণত মৌমাছিরা ফুল থেকে পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে তাদের মৌচাকে জমা করে রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত এই পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর হয়ে যায় এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায় মৌমাছিরা মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা সাধারানত মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং আরও সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধু শুধুমাত্র একটি খাদ্য নয়, খাঁটি মধুর উপকারিতা অপরিসীম।

খাঁটি মধুতে যে সব উপাদান থাকে

মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশমন্টোজ। আরও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশএনকাইম, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, আয়োডিন, জিংক, কপার, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।


যেসব ফুল থেকে মধু পাওয়া যায়

সাধারণভাবে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু হয় তার মধ্যে কিছু হল – সরিষা ফুল, লিচু, সুন্দর বন, কালজিরা থেকে মধু আহরিত হয়। এ ছাড়াও রয়েছে ধনিয়া ফুল, গুজি তিল ও তৃষি থেকেও মধু উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রায় সব উপাদান বা ফুল থেকে যে মধু আসে তার সবগুলার গুনাগুন প্রায় একই।


খাঁটি মধু চেনার উপায়

১) মধুর স্বাদ হবে মিষ্টি, এতে কোনও ঝাঁঝালো ভাব থাকবে না।
২) মধুতে কখনও কটু গন্ধ থাকবে না। খাঁটি মধুর গন্ধ হবে মিষ্টি ও আকর্ষণীয়।
৩) এক টুকরো ব্লটিং পেপার নিন, তাতে কয়েক ফোঁটা মধু দিন। যদি কাগজ তা সম্পূর্ণ শুষে নেয়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়।
৪) শীতের দিনে বা ঠান্ডায় খাঁটি মধু দানা বেঁধে যায়।
৫) একটি মোমবাতি নিয়ে সেটির সলতেটি ভালভাবে মধুতে ডুবিয়ে নিন। এ বার আগুন দিয়ে জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি জ্বলে
ওঠে, তাহলে বুঝবেন যে মধু খাঁটি। আর যদি না জ্বলে, বুঝবেন যে মধুতে জল মেশানো আছে।


খাঁটি মধুর উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়ঃ মধুর উপকারিতা, প্রথমেই যে কথাটি বলার তা হল মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের ভেতরে বাইরে কোনো রকম ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রতিরোধকারী শক্তি গড়ে তোলে, যে কোনো রকম সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

অম্বলের সমস্যাঃ খাঁটি মধু যদি ভোরবেলা খাওয়া যায় তা হলে অম্বলের সমস্যা, মুখে টক ভাব দূর করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয়। এই গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মেদ কমে যায়।

অনিদ্রায়ঃ অনিদ্রার জন্য খুব ভালো ঔষধ হল মধু। রাতে নিয়ম করে মধু খেলে গভীর ঘুম হয়।

রক্ত উৎপাদনেঃ রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ হল আয়রন। আর এই আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে মধুতে। ফলে শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা-সহ রক্তের ইত্যাদি উপাদানগুলি গড়ে তুলতে সাহায্য করে মধু।

রক্ত ও রক্তনালী পরিষ্কারঃ মধু নিয়মিত খেলে রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। অর্থাৎ রক্তনালী পরিষ্কার থাকে। সেখানে দূষিত কোনো পদার্থ যা স্বাস্থ্য হানির কারণ তা জমতে পারে না। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু খেলে পাকস্থলীর কাজ জোরালো হয়। কারণ এটি হজমে সাহায্য করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। তার ফলে পাকস্থলীর কাজ ভালো হয়।

ডায়রিয়া প্রতিরোধ করেঃ মধু ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই যাঁদের আমাশা, ডায়রিয়া বা পেট খারাপের প্রবণতা আছে তাঁরা নিয়মিত মধু সেবন করতে পারেন।

হজমের সমস্যাঃ মধুর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে খাবার খাওয়ার পর বদ হজম, গলা বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়।

বমিভাবঃ অনেকেই আছেন খাবার দেখলেই বা সামান্য খেলেই বমি বমি ভাব আসে। সেই সমস্যার সমাধানও করে মধু। বমিভাব কমায় মধু।

অরুচিঃ অনেকেই বেশি খেতে পারেন না। একটু খেয়েই হাঁপিয়ে ওঠেন। বা খাবারে ইচ্ছাটাই থাকে না। অরুচিতে ভোগেন। সে ক্ষেত্রে মধু খেলে খাবরে অরুচি কমে। খাবার চাহিদা বাড়ে।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় । চুল পড়া কমানোর উপায় কি ?

বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়ঃ মধু যে শুধু আপনার কায়িক শক্তি বাড়ায়, তা নয়। ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু খেলে তা মস্তিষ্কের কাজ সঠিক ভাবে চালাতে সাহায্য করে। তার ফলে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তথা বুদ্ধির জোর বাড়ে।

হৃদরোগেঃ মধুর উপকারিতার হৃদপেশিকে সুস্থ সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে আয়ু বৃদ্ধি পায়।

কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রেঃ মধু রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমার অর্থ হল হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাওয়া।

শরীরের নানান ব্যথায়ঃ আজকাল বেশি ভাগ মানুষেরই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা। ছোটো বড়ো সকলেরই ব্যথায় কষ্ট পাওয়ার একটি সমস্যা তো লেগেই থাকে। এই সমস্যার কারণ হল শরীরের অবাঞ্ছিত রস। এই রসের কারণে বাতের ব্যথা তৈরি হয়। সেই খারাপ রস অপসারিত করতে মধুর উপকারিতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

পেশিশক্তি বাড়াতেঃ পেশিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে মধু। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায়। পেশিকে অনেক বেশি কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।

গ্যাসট্রিক আলসারেঃ যাঁরা গ্যাসট্রিক আলসারের সমস্যায় রয়েছে তাঁরা নিয়মিত মধু খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। মধুর উপকারিতা অনেক

কালোজিরার উপকারিতা ও সর্তকতা, জানলে অবাক হবেন

দুর্বলতা দূর করেঃ অনেকেই সারাক্ষণ ঝিমুনি বা দুর্বল অনুভব করেন। এই ঝিমুনি, ঘুম ঘুম বা দুর্বল ভাব কাটানোর জন্য ও সারাক্ষণ তরতাজা থাকতে নিয়মিত খেতে পারা যায় মধু।

যৌন দুর্বলতায়ঃ মধুর উপকারিতা, অনেক পুরুষের একটা সমস্যা থাকে, তা হল যৌন দুর্বলতার সমস্যা। এই সমস্যা নানান রকমের হয়। এই সমস্যার একটিও যদি কোনো পুরুষের থাকে তবে তিনি নিয়মিত মধু খাওয়া শুরু করতে পারেন। তাতে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।

হাঁপানিঃ মধুর নানান গুণাগুণগুলির মধ্যে একটি হল এটি হাঁপানি রোগ কমাতে মধুর উপকারিতার কাজে আসে। তাই এই রোগ থাকলে তা কমাতে হলে খাওয়া যেতে পারে মধু।

হাড় ও দাঁতের গঠনেঃ মধুর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভেঙে যাওয়া রোধ করে।

দাঁতের যত্নেঃ মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ এটি দাঁতের জন্য খুবই ভালো। দাঁতের ক্ষয়রোধ করতে পারে মধু। অনেক সময়ই দাঁতে স্টোন হয় অর্থাৎ যাকে দাঁতে পাথর জমা বলে, সেই দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে মধু। তা ছাড়াও দাঁত পড়ে যাওয়া আটকাতে বা তা বিলম্বিত করতে সাহায্য করে মধু। সঙ্গে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

মুখের ঘায়েঃ অনেক সময়ই ভিটামিনের অভাবে মুখের ভেতরে ঘা হয়। অথবা দাঁতের মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে মধু জলে কুলি করলে উপকার মেলে।

দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য খুবই ভালো মধু। দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে মধুর উপকারিতার কথা বলা হয়।

সর্দি কাশি কমাতেঃ শিশুদের সর্দি কাশি ঠাণ্ডা লাগা কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মধু দেওয়া উচিত।

গলার স্বর যন্ত্রের জন্যঃ গলার স্বর যন্ত্রে বা স্বরনালীতে সংক্রমণ হলেও সেই ক্ষত দূর করতে নিয়ম মাফিক মধু সেবন করা যেতে পারে। তা ক্ষত নিরাময় করে। সংক্রমণ দূর করে।

তাপমাত্রা বাড়াতেঃ অনেক সময়ে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। কাঁপুনি দেয়। ইত্যাদি সমস্যায় অথবা শীতকালেও শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে মধু।

আর্দ্রতা বজায় রাখাঃ অনেক সময় নানান কারণে শরীর জলশূন্য হয়ে পড়ে। শরীরে জলের অভাব বোধ হয়। তার থেকে দেখা দেয় অন্যান্য অনেক সমস্যা। এই জলশূন্যতা বা আর্দ্রতার অভাব দূর করতে মধু খুবই সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে জলীয় উপাদানও।

তারুণ্য ধরে রাখতেঃ মধু এমন একটি উপাদান যাতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বল রং, টানটান ভাব ধরে রাখে। ফলে রিঙ্কেল পড়ে না। মধু তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

রূপচর্চায়ঃ ত্বক টানটান চকচকে করতে মধু একটি বিশেষ উপকারী উপাদান হিসাবে বিবেচ্য হয়।

চুলের স্বাস্থ্যেঃ মধুর উপকারিতা, শুধু ত্বক নয়। সৌন্দর্য বিদ্যায় চুলের বিশেষ যত্নেও মধুর উপকারিতার কথা বলা হয়। তাই চুলের যত্নেও ব্যবহার করা হয় মধু।

Related posts
Health tips

ঘরোয়া ভাবে পাইলস এর চিকিৎসা সাথে সাথে ফলাফল

পাইলস কি? ঘরোয়া ভাবে পাইলস এর…
Read more
Health tips

কালোজিরার উপকারিতা ও সর্তকতা, জানলে অবাক হবেন।

কালোজিরার উপকারিতা, কালোজিরার …
Read more
Health tips

চুল ঘন করার সহজ উপায় জেনে নিন।

চুল ঘন করার সহজ উপায় জেনে নিন। দিনের…
Read more
Newsletter
Become a Trendsetter

Sign up for Davenport’s Daily Digest and get the best of Davenport, tailored for you.

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *