পাথর হচ্ছে খুবই শক্ত,মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকৌশল সামগ্রী। শিলার বাণিজ্যিক উৎপাদন। নির্মাণ কাজে ব্যবহিত সামগ্রীর মধ্যে পাথরের ন্যায় শক্তিশালী ও স্থায়ীত্বশীল সামগ্রী আর একটি নাই বলে পাথরকে নির্মাণ সামগ্রীর রাজা বলা। আমরা এই পর্বে শিখবো ভালো পাথর চেনার উপায় ও পাথরের মাঠ পরীক্ষা।
রাসায়নিক উপাদানের উপর ভিওি করে পাথরকে ৩ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
১. বালিজাত পাথর,
2. কাদাজাত পাথর,
৩. চুনজাত পাথর।
১. বালিজাত পাথরঃ সিলিকা বা বিশুদ্ধ বালির পরিমাণ বেশি থাকে। খুব শক্ত, মজবুত, র্দীয়স্থায়ী এবং আবহাওয়াজনিত কারণে সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। যেমন- গ্রানাইট, কোয়ার্জাইট, ট্রাপ, বেলে পাথর ইত্যাদি।
২. কাদাজাত পাথরঃ এই পাথর এ কাদার পরিমাণ বেশি থাকে। এ পাথর খুব ঘন, দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু ভঙ্গুর হয়। যেমন- স্লেট ল্যাটেরাইট ইত্যাদি। এই সকল বৈশিষ্ট্য হলো কাদাজাত ভালো পাথর চেনার উপায়।
৩. চুনজাত পাথরঃ এই পাথরে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের পরিমাণ বেশি থাকে। পারি-পার্শ্বিক পরিবেশের উপর স্থায়িত্ব নির্ভর করে। যেমন- মার্বেল, চুনাপাথর, কংকর, গ্রাভেল ইত্যাদি।
ভালো পাথর চেনার উপায় সমূহ
১. ৩/৪” ডাউন সাইজ ঠিক আছে কিনা।
২. ওয়েল গ্রেডেড অথাৎ ৬০% হবে ৩/৪”, ৩০% হবে ১/২” এবং ১০% সিংগেল।
৩.বোল্ডার হতে পাথর ভাঙ্গা কিনা।
৪. সিঙ্গেল থাকবে না পাথর ভাঙ্গা হবে না।
৫. কাদা মুক্ত পাথর হতে হবে।
৬. মরা পাথর থাকবে না।
৭. এক ঘনফুট ভালো পাথরের ওজন ১৬০ পাউন্ড হতে ১৭০ পাউন্ড (৭৩-৭৭ কেজি) হবে।
আদিকালেও মানুষ পাথর ব্যবহার করত। প্রস্তরযুগের মানুষ পাথরকে আত্মরক্ষা ও পশু শিকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। কালক্রমে পাথর নির্মাণের প্রধান উপকরণ এ পরিণত হয়। পাথর খুবই শক্ত, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী সামগ্রী। সড়ক, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ কাজে পাথর ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন প্রকার পাথর থাকলেও এই সকল বৈশিষ্ট্য দেখে ভালো পাথর চেনার উপায় সম্পর্কে বিবেচনা করে নির্মাণ কাজে ব্যবহার উপযোগী কয়েকটি পাথর সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হল।
১. সিঙ্গেল পাথরঃ এই পাথর গোলাকার ও মসৃণ। কাজে ব্যবহারের উপযুক্ত সাইজের বা ৩/৪ অথবা ৩/৪ ডাউন গ্রেড এর পাথরের টুকরো গুলো কে সিঙ্গেল পাথর বলে। এ ধরনের পাথরের বিল্ডিং ক্ষমতা কম। সিদ্ধ ডিম এ চাপ দিলে যেমন- ভিতরের কুসুমটুকু বের হয়ে আসে ঠিক তেমনি সিঙ্গেল পাথর ভারি কাঠামোতে ব্যবহার করলে কংক্রিটে অধিক লোড পরার ফলে কংক্রিট থেকে এই পাথর স্লিপ করার সম্ভাবনা থাকে এ গুলো সাধারণত পাইলিং কাজে ব্যবহার করতে দেখা যায়।
২. ভূত ভাঙ্গা পাথরঃ সিঙ্গেল বা ৩/৪ ইঞ্চি থেকে বড় সাইজের পাথরের টুকরাগুলোকে মেশিনে ভাঙ্গা হয়। একটা পাথরকে ভাংলে দুই বা তার অধিক পাথর খণ্ড পাওয়া যায়। এই পাথরের ৩/৪ পাশের যে কোনো ১/৩ পাশে তেলতেলে মসৃণ ভাব থাকে।
এ পাথর গুলো ও ভারী কাঠামোতে ব্যবহারের অনুপযুক্ত। এগুলো সাধারণত পাইলিং কাজে ব্যবহার করতে দেখা যায়।
৩. বোল্ডার ভাঙ্গা পাথরঃ এই পাথরের টুকরা সবচেয়ে ভালো মানের। বড় বড় পাথর ভেঙ্গে ইপ্সিত আকারে পরিণত করা হয়। এ পাথরের টুকরা গুলোর গা খাজ কাটা কোনা আকৃতির। এর বন্ড ক্ষমতা অনেক শক্তিশালী। বড় বড় ভবন নির্মাণে এ পাথর ব্যবহার করা হয়। প্রকৃত পক্ষে পাথরের ব্যবহার কাঠামো অধিক শক্তিশালী হয় যা ভারী ভারী নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়।
নির্মাণকাজে ব্যবহারযোগ্য ভালো পাথর চেনার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে দেয়া হলো।
- পাথরের গঠনশৈলী খুব মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
- গঠনশৈলী সমসত্ব ও কেলাসিত হবে।
- পাথর সমসত্ব বর্ণের হবে।
- সরন্ধ্র বা ছিদ্রযুক্ত পাথর ব্যবহার ঠিক নয়।
- ভালো পাথরের পানি শোষণ ক্ষমতা খুবই কম হবে।
- ভালো পাথর চাপ বল প্রতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।
- ভালো পাথরের ঘনত্ব ও আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশি হবে।
- ঘর্ষণের কারণে সৃষ্ট ক্ষয় প্রতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।
- ভালো পাথর তরল প্রবেশে অভেদ্য হবে।
- পাথর তাপ কুপরিবাহী এবং এর বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা খুবই কম।
পাথরের মাঠ পরীক্ষা
পাথরের মাঠে পরীক্ষা কার্য নিম্নলিখিত উপায়ে করা হয়-
১. ওজন পরীক্ষাঃ সম আকারের ভিন্ন শ্রেণির দুটি পাথরের টুকরা হাতে নিলে, যেটি অধিকতর ভারী অনুভূত হবে ঐ পাথরটিই ভাল, কেননা ভারী পাথরের গঠন দৃঢ় এবং ছিদ্রের পরিমাণ কম, ফলে ওজন বেশি।
২. পাথর ভেঙ্গেঃ বিভিন্ন শ্রেণীর পাথর ভাঙ্গলে যেটি ভাঙ্গতে অধিক শক্ত অনুভূত হবে, সেটিই ভাল পাথর। কেননা দৃঢ়গঠনের টেকসই পাথর ভাঙ্গার কাজ হালকা ফাঁকা পাথর ভাঙ্গার কাজ অপেক্ষা অধিক কষ্টসাধ্য।
৩. বাহ্যিক দর্শনেঃ ভাঙ্গা পাথরের ভাঙ্গা পৃষ্ঠ দেখতে যদি সমতল হয় এবং দানাগুলো যদি স্পষ্ট দৃশ্য হয়, তবে ভাল পাথর বলে বিবেচিত হবে।
৪. রংয়ের সাম্যতা পর্যবেক্ষণেঃ সাম্য রং এর পাথর বিভিন্ন রংয়ের পাথর অপেক্ষা শক্ত ও স্থায়ী।
৫. আঘাত করেঃ কোন পাথরকে অন্য কোন পাথর বা হাতুড়ির সাহায্যে আঘাত করলে ধাতব আঘাতের ন্যায় শব্দ হলে তা ভাল পাথর বুঝায়।
৬. ঘর্ষণ করেঃ নির্মাণ কাজের কোন পাথরকে অপর পাথর বা শক্ত কিছু দ্বারা ঘর্ষণ করলে যদি পাথরটি ক্ষয় প্রাপ্ত হয় তবে পাথরটি নির্মাণ কাজের জন্য অনুপযোগী বলে বিবেচিত হবে। যে পাথরে ঘর্ষণের ফলে অধিক ধুলাবালি সৃষ্টি করবে তাও নির্মাণের জন্য অনুপযোগী।
৭. আঁচড় কেটেঃ কোন পাথরে চাকু বা ছুরি দ্বারা আঁচড় দিলে যদি সহজেই দাগ পড়ে তবে তা নির্মাণের জন্য অনুপযোগী।
৮. পৃষ্ঠদেশ দর্শনেঃ যে পাথরের গায়ে ফাটল দেখা যায় ঐ পাথর নির্মাণ কার্যে ব্যবহার অনুপযোগী।
৯. দীর্ঘদিনের উন্মুক্ত পাথর খাদ দর্শনেঃ দীর্ঘদিন উন্মুক্ত এরুপ পাথরের খাদ দেখে বুঝা যায় যে ঐ খাদের পাথরের উপর আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়া কি রুপ?
১০. পুরাতন ইমারত দর্শনেঃ কোন শ্রেণীর পাথরে নির্মিত পুরাতন ইমারত দেখেও ঐ শ্রেণীর পাথর সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।
উপরোক্ত পাথরের মাঠ পরীক্ষাগুলোই হল ভালো পাথর চেনার উপায় সমূহ। উপরের পরীক্ষাগুলো সম্পূর্ণ করে আমরা খুব সহজে ভালো পাথর চিনতে পারি।
প্রশ্ন ও উত্তর পর্বঃ
১. পাথর কি?
উওরঃ পাথর হচ্ছে খুবই শক্ত,মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকৌশল সামগ্রী। শিলার বাণিজ্যিক উৎপাদনই পাথর।
২. পাথরকে কেন নির্মাণ সামগ্রীর রাজা বলা হয় কেন?
উওরঃনির্মাণ কাজে ব্যবহিত সামগ্রীর মধ্যে পাথরের ন্যায় শক্তিশালী ও স্হায়িত্বশীল সামগ্রী আর একটিও নেই বলে পাথরকে নির্মাণ সামগ্রীর রাজা বলা হয়।
৩. পাথর উওোলনের জন্য কয়টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়?
উওরঃ ৪টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
- খনন পদ্ধতি
- তাপ পদ্ধতি
- ওয়েজিং পদ্ধতি
- বিস্ফোরণ পদ্ধতি
৪. সিলেটে কোথায় ভালো পাথর পাওয়া যায়।
উত্তরঃ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারীর অবস্থান। মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে বর্ষাকালে ঢল নামে। ধলাই নদীতে ঢলের সাথে নেমে আসে পাথর। পরবর্তী বর্ষার আগমন পর্যন্ত চলে পাথর আহরণ।