পাইলস কি?
ঘরোয়া ভাবে পাইলস এর চিকিৎসা সাথে সাথে ফলাফল: মলাশয়ের নিচের অংশ বা মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যাওয়া বা বলের মতো যাওয়াকে পাইলস বলে। পাইলস দু’ধরনের হয়, আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। পাইলস বা হেমোরয়েডস হলো মলদ্বারের একটি কমন রোগ যাকে মেডিকেলের ভাষায় হেমোরয়েডস বলা হয়। এই রোগটি অর্শরোগ নামেও প্রচলিত। মূলত পায়ুপথের রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ পড়লে অথবা দীর্ঘদিনের কোষ্টকাঠিন্যের ফলে পায়ুপথের রক্তনালী ফুলে গিয়ে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণত রক্তনালী ফুলে গিয়ে এক বা একাধিক নরম গোটা (আঙুরের মত) হয়ে থাকে যা পায়ুপথের ভিতরে অথবা বাইরে অবস্থান করতে পারে।
আভ্যন্তরীণ পাইলস কি?
যে পাইলস মলাশয়ের আভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডস পায়ুপথ বা মলদ্বারের অভ্যন্তরে হয়ে থাকে তাকে আভ্যন্তরীণ পাইলস বলে।
বাহ্যিক পাইলস কি?
মলাশয়ের বাহ্যিক হেমোরয়েডস পায়ুপথের বাইরের দিকে হয়। এই দু’ধরনের হেমোরয়েডসের মধ্যে সবচেয়ে কমন হচ্ছে বাহ্যিক হেমোরয়েডস। পাইলস বা হেমোরয়েডসকে অর্শরোগও বলা হয়। হেমোরয়েডস শব্দটি মার্কিন ভাষা।
পাইলসের কারণ :
প্রাণী দেহে হেমোরয়েডস হওয়ার পিছনে কতগুলো কারণকে সন্দেহ করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া ,
- স্থূলতা,
- বেশি সময় বসে থাকা,
- দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকা,
- হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্য ,
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায়
- ঘাটতি, ব্যায়াম না করা ,
- পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধি ,
- জন্মগত,
- গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হতে থাকে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া
- মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা
- দীর্ঘসময় ধরে টয়লেটে বসে থাকা
- পায়ুপথে যৌন সম্পর্ক করা (Anal sex)
- ভারোত্তোলনের কাজ করা
- অলস জীবন যাপন ইত্যাদি
সাধারনত কোলনের শিরায় চাপ পড়লে বলে শিরা স্ফীত হয়। যে কারণে পাইলস হয় থাকে। এই রোগের প্রথম দিকে ওষুধ ও সাবধানতা মেনে চললে এই রোগ সেরে যায়। তবে, এই রোগের জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।
পাইলস রোগের লক্ষণ :
পাইলস হলে সাধারণত যে যে লক্ষণ দেখে বোঝা যায়-
ক) মলের সাথে রক্ত পড়া পাইলসের প্রধান লক্ষণ। এক্ষেত্রে ফেলে না রেখে যখনই দেখবেন আপনার মলের সাথে রক্ত পড়ছে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
খ) মলদ্ধারে ব্যথা হওয়া। ফলে, বসতে অসুবিধা হওয়া।
গ) মলদ্বারের চারপাশে ফুলে যায় ও চুলকানি হয়।
ঘ) পাইলস এ আক্রান্ত হলে মলদ্বারের রক্তনালীতে চাপ বৃদ্ধি পায় বলে মল নির্গমনের সময় ব্যথা হয়।
ঘরোয়া ভাবে পাইলস এর চিকিৎসা :
সঠিক ট্রিটমেন্ট করলে কোনও অপারেশন ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই পাইলস বা অর্শ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
কিছু পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ হতে পারে –
০১ | সব সময় পায়ুপথের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন |
০২ | ফুলে গেলে বরফ লাগিয়ে নিতে পারেন |
০৩ | প্রদাহ বা সংক্রমণের দ্রুত চিকিৎসকের চিকিৎসা নিন |
০৪ | উষ্ণ গরম পানিতে দিনে কয়েকবার ভিজিয়ে নিন আরাম বোধ করবেন |
০৫ | চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত মলম ব্যবহার করুন । |
০৬ | নিয়মিত প্রচুর আঁশযুক্ত সবজি, ফলমূল ও খাবার গ্রহণ করবেন। |
০৭ | বেশি চর্বিযুক্ত খাবার , গোশত, কম আঁশ ও, কড়া মশলা, ফাস্টফুড ইত্যাদি পরিহার করে চলুন। |
০৮ | বেশি করে পানি পান করুন (৬-৭) লিটার। |
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করুন, মল আটকে রাখবেন না। মলত্যাগের সময় কখনো বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না।নিজের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। এছাড়া, নিয়মিত স্বাভাবিক ব্যায়ামের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য সারিয়ে তুলা যায়। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
মধুর উপকারিতা ও খাঁটি মধু চেনার উপায়
রোগীরা যখন চিকিৎসকের কাছে আসেন তখন চিকিৎসা কীভাবে শুরু হয় :
পাইলস কি পর্যায়ে আছে তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয় থাকে। পাইলসের বেশিরভাগ, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চিকিৎসা এখন অস্ত্রোপচার না করেই হয়ে থাকে । বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার সাহায্যে রক্তগুচ্ছটিকে নষ্ট করা হয়ে থাকে যেমন:
- ব্রেনলাইগেশন আছে,
- লেজার থেরাপি আছে,
- হিট কুয়াগুলেশন আছে- বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে।
সাধারণত তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে চিকিৎসা পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার লাগে। জিনিসটি যেহেতু বের হয়ে আসে এটি অস্ত্রোপচার করে সরাতে হয়। তবে রোগী যদি আগে চিকিৎসায় আসে, তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও এখন নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন হয়েছে। বাংলাদেশও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পথিকৃত। যেমন, পর্যায়-চার পাইলসের ক্ষেত্রে মিউকোসাল এক্সিশন করা হচ্ছে, আগে অস্ত্রোপচারের পরে অ্যানাল স্টেনোসিসের একটা আশঙ্কা থাকত, এতে মলদ্বার ছোট হয়ে যেত। তবে এখন মিউকোসোটা রেখে দিয়েই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এর ফলাফল খুবই ভালো। পাইলসের আধুনিকতম চিকিৎসাগুলোই এখন বাংলাদেশে হচ্ছে।
ঘরোয়া ভাবে পাইলস চিকিৎসা কি?
কোষ্ঠকাঠিন্য
পাইলস নিরাময় করতে হলে আপনাকে প্রথমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার বিষয়টি ভাবতে হবে কারণ পাইলসের সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত বলব কিভাবে ঘরোয়া ভাবে পাইলস ও কোষ্টকাঠিন্য দূর করা যায় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই যে কাজ গুলো করতে হবে তা হল:
- গরুর মাংস
- চর্বি জাতীয় খাবার
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার
- পিৎজা
- ফাস্টফুড ইত্যাদি খাওয়ার পরিহার করে চলতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য নির্মূল করতে করণীয়:
কোষ্ঠকাঠিন্য নির্মূল করতে আপনাকে প্রচুর পরিমানে ফলমূল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খেতে হবে কারণ ফলমূল ও শাকসবজি তে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা পাইবার থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে যেমন:
- মিষ্টি আলু
- গাজর
- ব্রকলি
- কলা
- শশা
- তরমুজ
- আপেল ইত্যাদি বেশি পরিমানে মানে গ্রহন করার চেষ্টা করুন।
ইসবগুলের ভুসি:
কোষ্ঠকাঠিন্য নির্মূল করতে ইসবগুলের ভুসি বিষেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।তাই নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করুন যা আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে। তাই প্রতিদিন ১ থেকে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি নিয়ে এক গ্লাস পানিতে গুলিয়ে রাথুন কিছু সময় পর খেয়ে নিন।প্রতিদিন দুই বার খাবার গ্রহণের পরে এভাবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারেন তবে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাল হয়ে আর নিয়মিত খাওয়ার দরকার নেই। ইসবগুলের ভুসি পানিতে গুলিয়ে রেখে দেওয়া যাবে না, সাথে সাথেই তা খেয়ে ফেলতে হবে।
কালোজিরার উপকারিতা ও সর্তকতা, জানলে অবাক হবেন।
ব্যথা নিরাময় করা:
কোষ্ঠকাঠিন্যের পর যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো পাইলসের ব্যথা নিরাময় করা। এক্ষেত্রেও কিছু ঘরোয়া উপায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এই পদ্ধতি গুলো একইসাথে ব্যথা নিরাময়ের পাশাপাশি রক্তপাত কমাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
গরম পানি: প্রথমে যা করবে একটি পরিষ্কার বড় গামলায় কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে তাতে কোমর ডুবিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বসে থাকতে হবে। এই পদ্ধতিতে দৈনিক ২ থেকে ৩ বার বসে থাকার মাধ্যমে আপনার ব্যথা ও জ্বালাপোড়া নিরাময় হবে তেমনি ভাবে রক্তপাত কমে যাবে।
ক্রিম/অলিভ অয়েল : পাইলস এর চিকিৎসা, পায়খানার রাস্তায় ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একই সাথে সহজেই আপনার মলত্যাগ করতে সাহায্য করবে তেমনি ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বরফ লাগানো: কয়েক খন্ড বরফ একটি তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে পায়খানার রাস্তায় কিছুক্ষণ লাগানোর মাধ্যমে ব্যথা ও ফোলা ভাব কমে যায়। সেই সাথে রক্তপাত কমাতেও এই পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
পাইলস এর চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়, #পাইলস #পাইলস _এর_চিকিৎসা