কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী পাথর, এ বিষয়ে জানার পূর্বে পাথরের ব্যবহার কিভাবে শুরু হল তা জানা দরকার। আদিকালেও মানুষ পাথর ব্যবহার করত। প্রস্তর যুগে মানুষ পাথরকে আত্মরক্ষার ও পশু শিকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো । কালক্রমে কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী পাথর নির্মাণের প্রধান উপকরণের পরিণত হয়েছে। পাথর খুবই শক্ত মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী সামগ্রী । যেমন বাড়ী তৈরি, সড়ক ও সেতু নির্মাণ কাজে পাথর ব্যবহার করা হয়।
কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী যেসব পাথর ব্যবহার করা হয় তার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ
- চারপাশে খসখসে ও কোন আকার হবে।
- পাথরের মিশ্রণ এক রকম মানের হবে। যেমন ভোল্ডার ভাঙ্গা পাথরের সাথে ভুতু ভাঙ্গা পাথরের মিশ্রণ একরকম হয় না।
- বোল্ডার ভাঙ্গা পাথর অনেকটা বড় পাথর হয়ে থাকে এ পাথর ভেঙ্গে ছোট করা হয় । বড় পাথর ভেঙ্গে যখন ছোট করা হয় তখন এই পাথরকে বোল্ডার ভাঙ্গা পাথর বলা হয়। এ পাথর চারপাশে খসখসে ও কোন আকৃতি হয় তাই বালু সিমেন্ট এর সাথে খুব সহজে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরী করতে পারে । বোল্ডার ভাঙ্গা পাথর কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য বেশ উপযোগী।
- ভুতু ভাঙ্গা পাথর অনেকটা ডিমের মতো ছোট পাথর। এই পাথর ভেঙ্গে যখন ছোট করা হয় তখন তাকে ভুতু ভাঙ্গা পাথর বলা হয় । এ পাথর অনেকটা তেলতেলে হয়ে থাকে। ভুতু ভাঙ্গা পাথর খসখসে হয় না, তাই বালু সিমেন্টের সাথে সহজে মিশতে পারে না। তাই বোল্ডার ভাঙ্গা পাথরের সাথে ভুতু ভাঙ্গা পাথর মিশ্রণ করে কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য এর ব্যবহারের উপযোগী করা হয়।
- পাথরের মিশ্রণে ছোট-বড় সব আকারের পাথর থাকবে।
- পাথরের গায়ে তেল জাতীয় পদার্থ, কয়লা ও মরা পাথরের সংমিশ্রণ থাকবে না।
পাথরের গুণগত মান পরীক্ষা
১.সম আকারের ভিন্ন শ্রেণীর দুটি পাথরের টুকরা হাতে নিলে যে পাথরটি অধিকতর ভারি অনুভূত হবে ঐ পাথরটিকনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী পাথর বলে বিবেচিত হবে কেননা ভারী পাথরের গঠন দূঢ় এবং ছিদ্রের পরিমাণ কম, ফলে ওজন অনেকটা বেশি হয। দুই টুকরা পাথরের মধ্যে যে পাথরটি ওজন বেশি সেই পাথরটি কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উত্তম।
২.কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী পাথর, বাহিক দর্শনে ভাঙ্গা পাথরের ভাঙ্গা পৃষ্ঠা দেখতে যদি সমতল হয় এবং দানাগুলো যদি স্পষ্ট হয় তবে সে পাথরটি ভালো পাথর বলে বিবেচিত হবে এবং কনস্ট্রাকশন কাজে বিনাদ্বিধায় ব্যবহার করা যাবে।
৩.কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী পাথর, অন্য কোন পাথর দ্বারা বা হাতুড়ি দাঁড়া আঘাত করলে ধাতব আঘাতের ন্যায় শব্দ হলে তা ভালো পাথর বুঝায়।
৪.কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী পাথর কে অন্য পাথর বা শক্ত কিছু দ্বারা ঘর্ষণ করলে যদি পাথরটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় সেই পাথর টা নির্মাণ কাজের জন্য অনুপযোগী বলে বিবেচিত হবে। আবার কোন পাথর ঘর্ষণের ফলে যদি অধিক ধুলাবালি সৃষ্টি করে সে পাথর নির্মাণ কাজের জন্য অনুপযোগী এ বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে নির্মাণ কাজের জন্য পাথর নির্ধারণ করা খুবই জরুরী।
৫.কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য উপযোগী যে পাথর নির্ধারণ করা হয়েছে সেই পাথরের গায়ে যদি ফাটল দেখা যায় তাহলে সে পাথর পরিবর্তন করতে হবে । ফাটা ময়লা যুক্ত পাথর কনস্ট্রাকশন কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
প্রতিটি পাথরের ধরণ এবং বৈশিষ্ট্য ভিত্তিতে কনস্ট্রাকশনের ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি পাথর তার বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে বিভিন্ন নির্মাণ কাজের জন্য উপযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ বেসাল্ট এবং গ্রানাইটের মতো উচ্চতর সংবেদনশীল শক্তি এবং স্থায়িত্বের মতো উন্নত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন পাথর বড় নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়
বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য যে ভিন্ন ভিন্ন পাথর ব্যবহার করা হয় তার কিছু তথ্য নিম্নে বর্ণনা করা হলো
১.ব্যসাল্ট
পাথর যা ফাঁদ হিসেবে পরিচিত। এই পাথর সড়ক নির্মাণে কংক্রিট সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ধ্বংসস্তূপে গাথুনির দিয়ে ব্রিজ পাইয়ার, নদীর দেয়াল বা, বাঁধ তৈরীতে এই পাথর ব্যবহার করা হয়।কাঠামোতে আলংকারিক বৈশিষ্ট্য বানাতে হলুদ এবং লাল রঙের ব্যসাল্ট এবং ফাঁদ রেলওয়ে ব্যালাস্ট হিসাবে ব্যবহার হয়।
2. গ্রানাইট
গ্রানাইট একটি অাগ্নেয় শিলা যা পৃথিবীর পৃষ্ঠা থেকে অনেক গভীরতায় ম্যাগমার দ্বারা গঠিত। এটা শক্ত এবং টেকসই। এটি বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়। এটি সুন্দর ভাবে পালিশ করা যায়। পোলিশ করার ফলে এটি রং হালকা ধূসর থেকে গোলাপি পরিবর্তিত হয়। পোলিশ করে গ্রানাইট টি টেবিলের শীর্ষ হিসেবে, কলাম এবং দেয়ালের জন্য ক্ল্যাডিং হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে । গ্রানাইট বড় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত হয় । যেমন ব্রিজ বাঁধ অফশোর কাঠামো ইত্যাদি নির্মাণের জন্য এটি ব্যবহৃত হয় । দেয়াল ও মেঝেতে ব্যবহার করা হয়।
৩. বেলেপাথর
সিলিকা সিমেন্টের সাথে স্যান্ডস্টেনগুলি ভারী কাঠামো তৈরিতে ব্যবহার হয়। এটি কোয়ার্টজ এবং ফেল্ডস্পার দিয়ে গঠিত। এটি সাদা ,ধূসর,লাল,বাফ, বাদামী, হলুদ বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়।এটি ব্যবহার করা হয় রাজমিস্ত্রি কাজে,বাঁধ, ব্রিজ, পাইয়ার এবং নদীর প্রাচীরগুলিতেও নিযুক্ত করা হয়।
৪. স্লেট
স্লেট একটি রূপান্তরিত শিলা নিম্নচাপ এবং তাপের পরিস্থিতিতে শেলের রূপক ক্রিয়া দ্বারা গঠিত হয়। এটা শক্ত এবং ভঙ্গুর। স্লেট মেঝে, ছাদ নির্মন, পার্টিশন ইত্যাদির জন্য ব্যবহার হয়।
৫. চুনাপাথর
চুনাপাথর পলি শিলাগুলির অন্তভুক্ত যা আবহাওয়ার কণার জমার মাধ্যমে গঠিত হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম কার্বনেট রয়েছে।এটি নরম এবং সহজে কার্যক্ষম। চুনাপাথর চুন এবং সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহার হয়। এটি মেঝে, ছাদ ইত্যাদির জন্যও ব্যবহার হয়।
৬. লটারাইট
লটারাইট বিল্ডিং স্টোন হিসাবে ব্যবহৃত হয় তবে এর বাইরের পৃষ্ঠে প্লাস্টার করা দরকার। এটিতে আয়রন অক্সাইড এর একটি উচ্চ শতাংশ রয়েছে এবং সহজেই ব্লকগুলি কাটা যায়। লটারাইট রুক্ষ পাথর নির্মাণের কাজ, ফুটপাত নির্মাণ কাজ ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়
৭. মার্বেল
মার্বেল শিলা গুলি রূপান্তরযোগ্য বিভাগের অন্তর্গত এবং যখন চুনাপাথর অতিরিক্ত তাপ এবং চাপের শিকার হয় তখন এটি তৈরি হয়। গঠনের এই প্রক্রিয়াটিকে রূপান্তর বলা হয়। মার্বেল প্রকৃতির শক্ত এবং সংক্ষিপ্ত। এটি বিভিন্ন রঙে ঘটে এবং এটি একটি ভালো পোলিশ নিতে পারে।
মার্বেল ফ্লোর এর কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি প্রয়োজনীয় আকারে সহজেই খোদাই করা যেতে পারে তাই এটি কাঠামোগত আলংকারিক এবং শোভাময় কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ
১.কোন সামগ্রীকে নির্মাণ সামগ্রীর রাজা বলা হয় ?
উওরঃ পাথর কে।
২.পাথর কে কোথায় হতে সংগ্রহ করতে হয়?
উওরঃ শিলা থেকে।
৩. পাথরকে কেন নির্মাণ সামগ্রীর রাজা বলা হয় কেন ?
উওরঃনির্মাণ কাজে ব্যবহিত সামগ্রীর মধ্যে পাথরের ন্যায় শক্তিশালী ও স্হায়িত্বশীল সামগ্রী আর একটি নাই বলে।
৪.অলংকার ও কারুকার্যে কোন ধরণের পাথর ব্যবহার করা হয় ?
উওরঃ গ্রানাইট পাথর ও মার্বেল পাথর ।
৫. পাথর উওোলনের জন্য কয়টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় ?
উওরঃ বিস্ফোরণ পদ্ধতি, তাপ পদ্ধতি, খনন পদ্ধতি,ওয়েজিং পদ্ধতি ।